সুলতানী আমলে বাংলা-চীনের জিরাফ কূটনীতির ইতিহাস।।Bangla-China Diplomacy at Medieval Age.

Описание: সুলতানী আমলে বাংলা-চীনের জিরাফ কূটনীতির বিস্ময়কর ইতিহাস।অবাক করা বিষয় হচ্ছে চীনের মানুষ প্রথম জিরাফ দেখতে পায় ৬১১ বছর আগে বাংলার সুলতানের উপহারের মাধ্যমে।
১৪১২ সালে বাংলার সুলতান শিহাবুদ্দিন বাইজিদ শাহ আফ্রিকার জিরাফ উপহার হিসেবে চীনে পাঠান।
চীন দেশে তখন মিং রাজবংশের শাসন চলছে।এদিকে বাংলাতে স্বাধীন সুলতানি আমল।সদ্য শেষ হয়েছে ইলিয়াস শাহী বংশের শাসন।গনেশের চক্রান্তে শিহাবুদ্দিন বসে পাণ্ডুয়ার সিংহাসনে।
বাংলার রাজধানী তখন প্রাচীন শহর গৌড়ের পাশের নগরী পাণ্ডুয়াতে।যা বর্তমানে অবস্থিত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায়।
বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতেও প্রাচীন গৌড়/পাণ্ডুয়ার একাংশ অবস্থিত ছিল।
তখন বছর বছর চীনের সাথে বাংলার সুলতানের রাজকীয় দূত আদান প্রদান হত। এখনকার প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে বিস্ময়কর মনে হয় বিষয়টা।

১৪০৫ সালে বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ চীন সম্রাটের নিকট প্রতিনিধি প্রেরণ করেন।
তার আগে ১৩৪৬ সালে বাংলায় আসেন বিখ্যাত বিশ্ব পর্যটক ইবনে বতুতা। দিল্লীর সুলতান মোহাম্মদ বিন তুঘলক প্রতিনিধি হিসেবে চীন যাওয়ার পরে সিলেটে গিয়ে হযরত শাহজালালের সাথে দেখা করতেই ইবনে বতুতা বাংলায় এসেছিলেন।

তার কয়েক বছর আগে ১৩৩৮ সালে দিল্লির সুলতানের সাথে সম্পর্ক ছেদ করে বাংলার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সোনারগাঁও স্বাধীন হয়ে যায় ফখরুদ্দিন মোবারক শাহর নেতৃত্বে।

তৎকালীন বাংলার অন্য দুটি অংশ ছিল সাতগাঁও এবং লখনৌতি বা গৌড়।

১৩৪২ সালে লখনৌতির সুলতান হয়ে উঠেন শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ।ধীরে ধীরে সোনারগাঁও এবং সাতগাও উনার নিয়ন্ত্রণে আসে‌।

ইলিয়াস শাহ হয়ে উঠেন বাংলার তিনটি অংশের সুলতান। ইতিহাসে এই প্রথম বাংলা নামে একটা এলাকা বিশ্বের বুকে পরিচিত হতে শুরু হল।এই অঞ্চলের সুলতান হলেন বাংলার সুলতান।প্রতারনা পরিচিতি পেতে লাগলো বাঙ্গালি হিসেবে।

ইলিয়াস শাহর উপাধি ছিল শাহ ই বাঙ্গালা।
ইলিয়াস শাহর ছেলে সুলতান সিকান্দার শাহ ৩৩ বছর শাসন করেন। সিকান্দার শাহর ছেলে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহর সময় চীনের সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু হয় বাংলার। শুধু তাই নয়।মক্কা এবং পারস্যের সাথেও গিয়াস‌উদ্দিন আজম শাহর কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল।
সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহর সমাধি রয়েছে বাংলাদেশের সোনারগাঁও অঞ্চলে।
ঐ সময় সোনারগাঁও দ্বিতীয় রাজধানী ছিল বাংলার।

আজম শাহ মৃত্যুর ৩/৪ বছর পর সুলতান শিহাবুদ্দিন বাইজিদ শাহ চীন সম্রাটের নিকট জিরাফ পাঠিয়েছিলেন।

ঐ জিরাফ আফ্রিকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।এর আগে চাইনিজরা কখনো জিরাফ দেখেনি।বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু প্রাণী বিস্ময়কর জিরাফ।

তখন বাংলা থেকে চীন দেশে দেশে ২/৩ মাস সময় লাগতো সমুদ্র পথে।

বাংলা থেকে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপ এবং সিঙ্গাপুর দেশের মধ্যবর্তী মালাক্কা প্রণালী দিয়ে চায়না যেতে হত জাহাজে।

1422 সালে চীনের সম্রাট 992 সদস্যের রাজকীয় প্রতিনিধিদল বাংলার সুলতানের নিকট পাঠিয়েছিলেন।

বাংলা সালতানাতের স্বাধীন সুলতানী আমলের ২০০ বছর এই অঞ্চলের স্বাধীন এবং গৌরবের ইতিহাস লালন করে।
Bengal Saltanat History