কবিতা-অদম্য ইচ্ছা শক্তি/Odommo Issa Sokti.কলমে-মোঃ জাকির হোসাইন,কণ্ঠে-চয়নিকা মণ্ডল।New Sad Poem 2022

Описание: কবিতা- অদম্য ইচ্ছা শক্তি
মোঃ জাকির হোসাইন

সপ্তম শ্রেণির পাঠ চুকিয়ে, বারো বছর বয়সে তোমার সংসারে এসেছিলাম! সংসার কী তা বুঝে ওঠার সে জ্ঞান তখনও আমার হয়নি! সেজন্য তোমার দেওয়া কষ্টগুলো আমার মনে দাগ কাটেনি! তবে তোমার কোন অবহেলা আমি কখনো সইতে পারিনি !
যখন জানতে পেরেছি, নয় বছরের প্রেমের ধ্বংসস্তুপ থেকে তোমাকে বাঁচাতে, আমার জীবনের সাথে তোমার জীবনকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তখন বেশ অবাক হয়েছিলাম! বিয়ের এক মাস পেরুতে না পেরুতেই যখন জানতে পেরেছিলাম, পুরাতন প্রেমিকার সাথে তোমার আবার যোগাযোগ শুরু হয়েছে তখন আরও বেশি অবাক হয়েছিলাম, তবে ভেঙেপড়িনি কখনো!

যখন বুঝেছি দিনে দিনে আমি তোমার বোঝায় রুপান্তরিত হচ্ছি, তখন ভেবেছি নিজের পথ নিজেকেই চিনতে হবে!
তোমার সব কিছু নিরবে সহ্য করে, সংসারের পাশাপাশি লেখাপড়া শুরু করলাম।
অনেক প্রতিকুল পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হয়েছে। সহপাঠীদের সাথে লেখাপড়া বিষয়ক কোন রকম যোগাযোগ ছিলোনা,সেটা ছিলো নাকি দোষের!
এস.এস.সি'র আগ পর্যন্ত খেলাধূলা আমাকে খুব টানতো, তাই সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে প্রতিবেশি, সহপাঠী ও দেবর ননদদের সাথে খেলায় মেতে উঠতাম।
আমার প্রতি ছিলো সবার কড়া শাসন। এটা করোনা, ওটা করো কেন, তুমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছো। এমন কত শত বকা যে সইতে হয়েছে আমাকে!

নানান প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে এস.এস.সি পরিক্ষা দিয়েছি, তবে অনাহুত এক সন্তানের ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার কষ্টে আমি এস.এস.সি পরিক্ষার আনন্দটাই উপভোগ করতে পারিনি!

আমার কষ্টটা তুমি কখনো উপলব্ধি করোনি, বুঝতেও চাওনি কখনো! তুমি তো পুরুষ, তুমি তো পাষাণ! তুমি কখনো কোন কিছুতে আমাকে বুঝতে চেষ্টাই করোনি, সান্ত্বনা দাওনি কখনো আমায় !

কিন্তু আমি যে নারী, আমি যে মা! সন্তান হারানো ব্যথায় ছটফট করেছি, সন্তান লাভের আশায় ব্যাকুল হয়েছি সব সময়!

অনেক ধৈর্য, অনেক প্রতিক্ষা, অনেক কষ্ট সহ্য করার পর যখন আমার সন্তান- আমার ছেলে পৃথিবীর আলো দেখলো, তখন তুমি আমার প্রতি ছলে উদাসীন।ছেলের পিছনে অনেক ব্যয় ছিলো, এদিকে নিজের লেখাপড়ার খরচটাও তো চালাতে হচ্ছে, সব মিলিয়ে তোমার যতটা সাপোর্ট পাওয়ার ছিলো ততটা পাইনি, সেজন্য এইস.এস.সি পড়াকালীন একটা কোম্পানির রিসিপশনে চাকরি নিয়েছি। লেখাপড়া, চাকরি, সংসার ছেলেমেয়ে সামলানো সব চলেছে একসাথে তবে জীবন একঘেয়ে হয়নি। উৎসাহের সাথে রাত দিন শ্রম দিয়েছি, উদ্দেশ্য ছিলো নিজে লেখাপড়া শেষ করে স্বাবলম্বী হবো। আজ আমি সফল। লেখাপড়া শেষ করেছি চাকরিতে পদোন্নতি পেয়েছি, প্রায় তিনগুন পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পেয়েছে। টাকার কোন কষ্ট আমার আর নেই। তবে আছে মানষিক কষ্ট, সে কষ্ট আমি কখনো তোমাকে বুঝতে দেইনি। তুমি কখনো বুঝতেও চাওনি আর আমার কষ্ট দেখার কোন সময় কখনো তো তুমি পাওনি! দিন শেষে আমি যে বড্ড একা, একাকিত্ব আমাকে চেপেধরে, নিজের সাথেই নিজেই কথা বলি, আমার সাথে তো কথা বলার কেউ নেই, আমাকে সঙ্গ দেবার মতো কেউ নেই।আমি ঘর বাঁধতে পরিনি, তোমাকেও বাঁধতে পারিনি কখনো এ আমার ব্যর্থতা। যেদিন তোমার ঘর ফাঁকা হবে, যেদিন তোমার বুক ফাঁকা হবে, সেদিন ঠিক বুঝবে আমার প্রয়োজন কতখানি ছিলো।