বড়পরং- কাপ্তাই বাঁধ ও পাহাড়ের কথা

Описание: নয়নাভিরাম কাপ্তাই লেকের ইতিহাস আমরা কি সবাই জানি?
কাপ্তাই লেক সৃষ্টি হয়েছে কাপ্তাই বাঁধ-জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে।আর এই লেকের কারণে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে প্রায় ১ লাখ আদিবাসীকে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি ১৫৫০ সালের দিকে বাংলার প্রথম মানচিত্রে ছিল। তখন এর নাম ছিল ‘চাকোমাস। ১৬৬৬ সালে আরাকানের রাজার কাছ থেকে মুঘল এবং এরপর এলাকাটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসেবে এলে এর নামকরণ করা হয় চিটাগাং হিল ট্র্যাক্ট্স বা পার্বত্য চট্টগ্রাম।
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগের পর ষাটের দশকে পাকিস্তান সরকার এবং দাতা সংস্থা USAID এর সহায়তায় শুরু হয় কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মাণ।
বাঁধ নির্মাণে সময় ৬৫৫ বর্গ কিলোমিটারে এলাকা প্লাবিত হয়, যার মধ্যে ছিলো ২২ হাজার একর চাষযোগ্য জমি, যা পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট চাষযোগ্য জমির যা প্রায় ৪০ শতাংশ।
এছাড়া কাপ্তাই লেক নির্মাণে প্রায় ১৮ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি বিলুপ্ত হয়, প্রায় ১ লাখ মানুষকে তাদের আবাসভূমি থেকে সরে যেতে হয়, যার মধ্যে ৭০ শতাংশই চাকমা জনপদের মানুষজন।
যে ১ লাখ মানুষকে তাদের আবাসভূমি থেকে সরানো হয়েছিলো তাদের সঠিক উপায়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। বাঁধ নির্মাণের সময় আদিবাসীদের মতামতের তোয়াক্কাও করা হয়নি। এমনকি দাতা এবং কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের আদিবাসীদের জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতির ব্যাপারটিকে আমলে নেয়নি।
কিছু গবেষণা থেকে উঠে এসেছে, এক লক্ষ মানুষের পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ ছিলো না। প্রাথমিকভাবে যখন বাঁধের কাজ শুরু হয় তখন অনেক মানুষকেই কাসালং উপত্যকায় নিয়ে আসা হয়। সংরক্ষিত বনাঞ্চল সাফ করে সেখানে জমি তৈরি করে বসবাসের সুযোগ করে দেয়া হলেও ১৯৬২ সালের বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার পর সেই এলাকাও প্লাবিত হয়।
এই প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য পরিমাণ মতো অর্থ ছাড় দিতে ব্যর্থ হয়েছিলো তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে চাষাযোগ্য জমিও প্রতিশ্রুতি মতো দেয়া হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্বপুরুষদের আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে প্রায় চল্লিশ হাজার চাকমা ভারতের অরুণাচল প্রদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। অরুণাচলে আশ্রয় নেয়া এই চাকমা শরণার্থীদের চিহ্নিত করা হয়েছে 'পরিবেশগত কারণে সৃষ্ট শরণার্থী' হিসেবে।
বর্তমানে কাপ্তাই লেকে তৈরি হয়েছে বিনোদন কেন্দ্র। কিন্তু এর ইতিহাস লক্ষাধিক মানুষের বাস্তুভিটা ও আবাদভূমি হারানোর কান্নায় জড়ানো।