মওলানা রূমীর মসনবী শরীফ-১৬৪ : জন্ম মৃত্যু ও পরকাল দর্শন
Автор: CHAYAPATH PROKASHONI
Загружено: 2023-08-30
Просмотров: 3687
Описание:
মরুময় আরবে দূর পাল্লার সফরের নির্ভরযোগ্য বাহন ছিল উট। তাই উটের আরেক নাম মরুভূমির জাহায। ধূসর মরুর নিকট-পাল্লার আরেকটি যানবাহন খচ্চর। খচ্চর একদিন উটের কাছে জানতে চায়, বন্ধু! আমিও তোমার মতো যানবাহনের কাজ করি; কিন্তু তোমার তুলনায় আমি অনেক পিছিয়ে, কারণ কী? তোমাকে দেখি, উঁচু টিলায় চড়ে, মরুর বুক চিরে, এমনকি অলিগলি দিয়ে চড়াই উৎরাই সমানে মাড়িয়ে পথ চল। কোথাও হোঁচট খাও না: ক্লান্ত হও না! অথচ আমার অবস্থা পথভোলা মানুষের মতো। আমি পা পিছলে পড়ে যাই। পদে পদে হোঁচট খাই। এর কারণ কি বলতে পার? তোমার তালিম পেলে আমার পদক্ষেপও শক্ত হবে, আশাকরি।
উট বলে, ছোট বন্ধু! এর কারণ, দুটি দিক দিয়ে আমি তোমার চেয়ে অগ্রগামী। একটি, আমার চোখের জ্যোতি। তোমার দৃষ্টিশক্তির চেয়ে আমার দৃষ্টিশক্তি প্রখর। দ্বিতীয়ত আমার গর্দান তোমার গর্দানের চেয়ে অনেক উঁচা। এ কারণে অনেক উপর থেকে দেখার সুবিধাটা আমার আছে।
আমি পাহাড়ের উপর উঠলে গিরিপথের শেষ পর্যন্ত দেখতে পাই। রাস্তার খাদ-খন্দক, চড়াই উৎরাই সবকিছু দেখে নেয়ার সুবিধাটা আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন।
আমি হুঁশজ্ঞান ঠিক রেখে পথ চলি, তাই আমার পথচলার পদক্ষেপ মজবুত। জীবন যাত্রার পথে পথে আমি গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে যাই না। কোনো কাজ করতে হলে বুঝে শুনে অগ্রসর হই। সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তের আলো না দেখা পর্যন্ত আমি সুড়ঙ্গে প্রবেশ করি না। আর তোমার অবস্থা হল,
তোমার দৃষ্টি সংকীর্ণ। সম্মুখের এক কদম দুই কদমের বেশি দেখ না। শিকারি মাঠে দানা ছড়ায়। তুমি সেই দানা ও খাবারটাই দেখ, নিচে পাতানো ফাঁদের জাল দেখ না। ফলে বস্তু ও ভোগের কবলে গ্রেফতার হয়ে পদে পদে হোঁচট খাও। এখন তুমিই বিচার কর-
একজন লোক অন্ধ, আরেকজন দৃষ্টিবান। তারা যখন দাঁড়ায়, কিংবা নিচে নামে বা পথ চলে তখন উভয়ের অবস্থা কি সমান হয়? আল্লাহ পাক বলেন,
কাফের ও মুমিনের অবস্থা দুই শ্রেণির লোকের মত। একটি শ্রেণি অন্ধ ও বধির। আরেক শ্রেণি দৃষ্টিবান ও শ্রবণশক্তি সম্পন্ন। উভয় শ্রেণির অবস্থা কি এক রকম হতে পারে? এরপরও কেন তোমরা সত্যকে উপলব্ধি করতে পার না।’ (সূরা হুদ: আয়াত-২৪)
মওলানা রূমী (র) বলতে চান, জীবন পথে তোমার প্রতিটি পদক্ষেপ মজবুত হতে হলে তোমার দৃষ্টিভঙ্গিকে উন্নত করতে হবে। চিন্তায় চরিত্রে আহারে বিহারে যাবতীয় হীনতুচ্ছ বিষয় পরিহার করতে হবে। এক কথায় জীবন পথের শেষ গন্তব্য উপলব্ধি করার শক্তি অর্জন করতে হবে। তখনই তুমি সত্য ও ন্যায়ের উপর অবিচল থাকার শক্তি পাবে। মৃত্যুভয়কে জয় করতে পারবে। সেই শেষ গন্তব্য পরকাল।
যারা পরকালে বিশ্বাসী নয় তাদের প্রশ্ন, মানুষ যখন মৃত্যুর পর মাটির সাথে মিশে যাবে, পরকালে আবার কীভাবে নতুন জীবন লাভ করবে?
অকাট্য যুক্তি বিন্যাসে মওলানা রূমী জোরালো ভাষায় বলতে চান, আল্লাহ তাআলা যখন মাতৃগর্ভের ভ্রæণে প্রাণ সঞ্চার করেন, তখনই প্রাণকে এ ক্ষমতা প্রদান করেন যে, সে নিজের বর্ধিত হওয়া, মানুষে রূপান্তরিত হওয়া ও জীবন ধারণের যাবতীয় উপাদান খাদ্যপানীয়, শ্বাস প্রশ্বাস বা অন্য যে কোনো উপায়ে নিজের মধ্যে টেনে নেয়। জীবনকে সাজায়, চালায়। এখন যদি প্রাণদাতা আল্লাহ মৃত্যুর পর ছিন্নভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জড়ো করে জীবিত করেন, তাহলে অবাক হওয়ার বা অবিশ্বাস করার কী আছে? পরকালে মানবদেহ পুনরায় জীবিত হওয়ার আরেক প্রমাণ ঋতুচক্রের বিবর্তন। খরায় মৃত উদ্ভিদ, তরুলতা নিশ্চিহ্ণ হওয়ার পর আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি আসলে পুনরায় জীবন ফিরে পায়।
হে মানুষ! পুনরুত্থান সম্বন্ধে যদি তোমরা সন্দিহান হও হবে অনুধাবন কর যে, আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি হতে। তারপর শুক্র হতে, তারপর আলাকা হতে, এরপর পূর্ণাকৃতি অথবা অপূর্ণাকৃতি গোশতপিন্ড হতে Ñ তোমাদের নিকট এ কথা ব্যক্ত করার জন্য যে, আমি যা ইচ্ছা করি তা এক নির্দিষ্টকালের জন্য মাতৃগর্ভে স্থিত রাখি, তারপর আমি তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি, পরে যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু ঘটান হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয় হীনতম বয়সে। যার ফলে তারা যাকিছু জানত সে সম্বন্ধে তারা সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভুমিকে দেখ শুষ্ক, অতপর আমি তাতে বারি বর্ষণ করলে তা শস্য-শ্যামলা হয়ে আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদ্গত করে। এটা এ জন্য যে, আল্লাহ সত্য এবং তিনিই মৃতকে জীবন দান করেন এবং তিনি সববিষয়ে শক্তিমান।
এবং কিয়ামত আসবেই তাতে কোনো সন্দেহ নাই। এবং কবরে যা আছে তাদেরকে নিশ্চয় আল্লাহ উত্থিত করবেন।’ (সূরা হজ : আয়াত-৫,৭)
মওলানা রূমী বলেন, চিন্তাকে আরেকটু কাজে লাগাও, বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা দেখ। প্রতিদিন ঘুমাও, জাগ্রত হও। ঘুমের সময় আল্লাহ হুশজ্ঞান অনুভূতি মানুষের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। আবার যখন জাগ্রত হয়, সেই অনুভূতি, হুশজ্ঞান ও মানসিক শক্তি ফিরিয়ে দেন। এ তো মৃত্যুর পর দেহের বিচ্ছিন্ন অঙ্গগুলো প্রাণকে কেন্দ্র করে পুনরায় জড়ো হওয়ার প্রতিদিনকার মহড়া, নৈমিত্তিক অভিজ্ঞতা। মওলানা বলছেন, প্রতিদিন ঘুম আর জাগরণের এই ব্যবস্থার পেছনে হেকমত কি?
প্রতিদিন তোমাকে এই বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করার পেছনে হেকমত হল, তুমি যাতে জেনে রাখ, উপলব্ধি কর যে, কোনো জিনিষই, এমনকি হুঁশজ্ঞান, চেতনা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতি আল্লাহর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বের বাইরে নয়। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
ٱللَّهُ يَتَوَفَّى ٱلۡأَنفُسَ حِينَ مَوۡتِهَا وَٱلَّتِي لَمۡ تَمُتۡ فِي مَنَامِهَاۖ فَيُمۡسِكُ ٱلَّتِي قَضَىٰ عَلَيۡهَا ٱلۡمَوۡتَ وَيُرۡسِلُ ٱلۡأُخۡرَىٰٓ إِلَىٰٓ أَجَلٖ مُّسَمًّىۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ
‘আল্লাহই প্রাণ হরণ করেন জীবসমূহের তাদের মৃত্যুর সময় এবং যাদের মৃত্যু আসেনি তাদের প্রাণও নিদ্রার সময়। অতপর তিনি যার জন্য মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অপরগুলো ফিরিয়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।’ (সূরা যুমার : আয়াত-৪২)
(মওলানা রূমীর মসনবী শরীফ, তৃতীয় খন্ড, বয়েত: ১৭৪৬-১৭৬২)
Повторяем попытку...

Доступные форматы для скачивания:
Скачать видео
-
Информация по загрузке: