বাড়িতে মাছ চাষ করে বছরে ২ লক্ষ টাকা আয় করুন,

Описание: মাছের খামার করে চাইলেই স্বাবলম্বী হতে পারেন। তবে মাছের খামার করতে হলে আপনাকে জানতে হবে অনেক কিছু। মাছের খামারের আদ্যোপান্ত জেনেই মাছের খামার ব্যবসা শুরু করতে হয়। কীভাবে করবেন জানালেন মো. মনিরুজ্জামান


মাছ চাষ ও বিক্রি করে সহজেই উপার্জন করা যায়। অল্পকিছু অভিজ্ঞতা থাকলে করতে পারেন মাছের খামার। মাছ চাষ ব্যবসা লাভজনক করতে শুরুতেই কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এই ধাপের মধ্যে রয়েছে ফার্মের জমি বা এলাকা নির্বাচন, মাছের ফার্মের ধরন (খাঁচা, ট্যাংক বা পুকুর), খাঁচা বা পুকুর নির্মাণ, মাছ প্রজাতি নির্বাচন, খাওয়ানো, যত্ন ও ব্যবস্থাপনা, সংগ্রহ ও বিপণন নির্বাচন করে করতে হবে।


জায়গা নির্বাচন

বাণিজ্যিক মাছ চাষের ব্যবসা শুরু করার জন্য উপযুক্ত জমি বা এলাকা নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। উপকূলীয় এলাকা এবং বড় নদী বা প্রবাহের কাছাকাছি এলাকা মাছ চাষের ব্যবসার জন্য উপযুক্ত। মাছের খামারের জমি বা এলাকা নির্বাচন করার সময় যা অনুসরণ করতে হবে অপেক্ষাকৃত সমান জমি উপযুক্ত। খাড়া বা ঢালু জমিতে মাছ চাষ করা যাবে না। জমি নির্বাচন করার সময় যে বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তাহলো বন্যা এবং দূষিত এলাকাগুলো এড়িয়ে চলা। কারণ বন্যাপ্রবণ এলাকা মাছ চাষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ব্যবসাও ব্যাপকভাবে ক্ষতি করতে পারে। ফসলি জমির কাছাকাছি মাছ চাষের জমি নির্বাচন না করাই ভালো। কারণ কৃষকরা সাধারণত ভালো ফসল উৎপাদনের জন্য জমিতে সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করেন। এই রাসায়নিক পানির সঙ্গে মিশে যায় এবং দূষিত পানি মাছের খামারের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি খামারের জমি প্রধান পানির উৎস থেকে সামান্য নিচে হয়। এরফলে খামারের জমিতে পানি পাওয়ার খরচ কম হবে। খামার এলাকায় ভালো পরিবহনব্যবস্থা থাকা। পণ্য বিপণন এবং বাজার থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করার জন্য ভালো পরিবহনব্যবস্থা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।


খামারের ধরন

মাছ চাষের নানা ধরনের খামার রয়েছে। এরমধ্যে খাঁচা সিস্টেম, ট্যাংক সিস্টেম বা পুকুর সিস্টেম নির্বাচন করা যায়। খাঁচা পদ্ধতিতে, উপযুক্ত খাঁচা তৈরি করুন এবং এটি হ্রদ বা পুকুরে রাখুন এবং বিপণনের বয়স না হওয়া পর্যন্ত মাছকে খাওয়াতে হবে। ট্যাংকগুলোতে মাছ উত্থাপন করার ক্ষেত্রে, সেখানে কয়েকটি ট্যাংক তৈরি করে মাছ সংরক্ষণ করতে হবে।

পুকুর নকশা ও তৈরি

খামারের এলাকা নির্বাচন করার পরে পুকুর খনন করাও গুরুত্বপূর্ণ। পছন্দসই নকশার পুকুর তৈরি করুন। পুকুর তৈরি মূলত আপনি কী ধরনের মাছের প্রজাতি নির্বাচন এবং পুকুরের অবস্থানের ওপর নির্ভর করবে। নির্দিষ্ট মাছ প্রজাতির জন্য কোনটা সঠিক পুকুরের নকশা হবে সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।

মাছ নির্বাচন

মাছ চাষের ব্যবসা হিসেবে সর্বোচ্চ লাভের জন্য উপযুক্ত মাছ নির্বাচন করাও গুরুত্বপূর্ণ। এমন মাছ নির্বাচন করতে হবে স্থানীয় বাজারে যাদের বিশাল চাহিদা ও উচ্চমূল্য রয়েছে। মাছের চাষে বহুল প্রচলিত প্রজাতি হলো কার্প, স্যালমন, তেলাপিয়া এবং ক্যাটফিশ। এই প্রজাতির মাছ বিভিন্ন ধরনের কৃষি-আবহাওয়ার পরিবেশে চাষের জন্য উপযুক্ত। চাষের জন্য মাছের প্রজাতি নির্বাচন স্থানীয় সুবিধা, চাহিদা এবং দামের ওপর অনেকটা নির্ভর করে।


মাছের খাবার

খামারের মাছকে উচ্চমানের এবং পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। উচ্চমানের খাবার শুধুমাত্র সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করে না, মাছটিকে স্বাস্থ্যকর রাখতেও সহায়তা করে। নির্দিষ্ট মাছ প্রজাতির জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক মাছের খাবার পাওয়া যায়। এসব খাবার কিনে মাছকে খাওয়াতে পারেন আবার নিজেরাও তৈরি করতে পারেন। নিজে খাবার বানালে ভিটামিন, খনিজ, লবণ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো মাছের জন্য অবশ্যই রাখতে চেষ্টা করবেন। মাছের প্রজাতির ওপর নির্ভর করে মাছকে দিনে অনেকবার খেতে দিন।

যত্ন ও ব্যবস্থাপনা

সবসময় খামারের মাছকে তাজা এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। মাঝে মাঝে পুকুরের পানি পরিবর্তন করতে পারলে ভালো। যদি সম্ভব না হয় তবে আপনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু রাসায়নিক ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত আপনার মাছের স্বাস্থ্য নিরীক্ষণ করুন। পুকুরের পরিবেশ ও পানি পরিষ্কার রাখলে মাছেদের উপযুক্ত বৃদ্ধি হবে। নিয়মিতভাবে পুকুরের পানি এবং মাটির মান পরীক্ষা করতে হবে।

মাছ চাষ


নির্দিষ্ট সময়ের পর মাছ বিক্রির উপযুক্ত হয়। যখন মাছের একটি বড় সংখ্যা বিপণনের বয়সে পৌঁছে যায় তখন মাছ চাষ শুরু করুন। আপনি বিক্রির জন্য বা পুকুর থেকে পানি সরিয়ে নিতে বা জাল ব্যবহার করতে পারেন। সকাল বা বিকেলে যখন তাপমাত্রা কম থাকে তখন ধরার চেষ্টা করুন। মাছ ধরার পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাছ বাজারে পাঠান।

বিপণন

মাছ বিক্রির সময় আপনি সহজে আপনার নিকটতম স্থানীয় বাজারে মাছ বিক্রি করতে পারেন। অথবা মাছ সংগ্রহকারী আড়তদারদের কাছেও বিক্রি করা যায়। এছাড়া বিদেশে মাছ রপ্তানি করে এমন অনেক কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে মাছ বিক্রি করতে পারেন।