প্রাক ইসলামি আরবের সাংস্কৃতিক অবস্থা
Автор: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ডিগ্রি - [১ম-৬ম ]
Загружено: 2023-04-12
Просмотров: 527
Описание:
প্রাক-ইসলামি আরবের সাংস্কৃতিক অবস্থা
Cultural Conditions of Pre-Islamic Arabia
প্রাক-ইসলামি আরবের সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা বিশৃঙ্খল হলেও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাদের পরিচিতি গৌরবময়।
তারা অধিকাংশ নিরক্ষর ছিল।
কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের অসাধারণ প্রতিভা ও প্রখর স্মৃতিশক্তি তৎকালীন আরববিশ্বের বাইরে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছে।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাদের পদচারণার নানা দিক নিচে উপস্থাপন করা হলো—
সাহিত্যচর্চা:
প্রাক-ইসলামি যুগে আরবরা সাহিত্যচর্চায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে।
এ সময় অনেক কাসিদা বা গীতিকাব্য (ode) রচিত হয় ।
নিজ বংশের গৌরবগাথা ও বিভিন্ন যুদ্ধের কাহিনি নিয়ে এসব গীতিকাব্য রচিত হতো।
ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টির মতে, “পৃথিবীতে অন্য কোনো জাতি আরবদের মতো সাহিত্যচর্চায় এত বেশি স্বতঃস্ফূর্ত একাগ্রতা প্রকাশ করেনি।”
কাসিদা ছাড়াও ‘সাজা’ বা অন্তঃমিলযুক্ত পদ্যের কথা জানা যায়।
অবশ্য কাসিদাই ছিল বেশি প্রচলিত কাব্যরীতি।
তখনকার আরবদের কাব্যচর্চা সম্পর্কে ব্রিটিশ প্রাচ্যবিদ আর. এ. নিকলসনের (Reynold Alleyne Nicholson) মন্তব্য হলো, “সে যুগে কবিতা শুধু কিছু সংস্কৃতমনা লোকের বিলাসিতার বস্তুই ছিল না, বরং এটি ছিল তাদের সাহিত্য প্রতিভা প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম।”
‘দিওয়ান আল-হামাসা’, ‘আল মুফাজ্জালিয়াত’, ‘কিতাব আল- আগানি' প্রভৃতি গ্রন্থে প্রাক-ইসলামি যুগে আরবে রচিত গীতিকবিতাগুলো সংকলিত আছে ।
কবিতাচর্চা ও কবিতা প্রতিযোগিতা:
প্রাক-ইসলামি যুগে কাব্যচর্চার প্রতি আরবদের বিশেষ আগ্রহ ছিল।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই কবিতাচর্চা করত।
তাদের কবিতার বিষয়বস্তু ছিল নারী, প্রেম, বংশগৌরব, কুলজি, বীরত্বপূর্ণ কাহিনি ও যুদ্ধ-বিগ্রহের ঘটনাবলি ।
অশ্লীল বিষয়েও কবিতা রচিত হতো।
তবে বিষয়বস্তু যাই হোক না কেন, আরবদের কবিতায় তাদের উন্নত ভাষাজ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়।
এছাড়া জানা যায় তৎকালীন আরবদের দৈনন্দিন জীবন, আতিথেয়তা, বীরত্ব প্রভৃতি সম্পর্কে।
এজন্য প্রাক-ইসলামি যুগে রচিত কবিতাগুলোকে ‘The Public Register of the Arabs' বলে অভিহিত করা হয়।
পি. কে. হিট্টি বলেন, “কাব্যপ্রীতিই ছিল বেদুইনদের সাংস্কৃতিক সম্পদ'।
এ যুগের খ্যাতিমান কবিদের মধ্যে ইমরুল কায়েস, তারাফা, আমর ইবনে কুলসুম, লাবিদ ইবনে রাবিয়া, আনতারা ইবনে শাদ্দাদ, হারিস ইবনে হিল্লিজা ও যুহায়ের প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এদের মধ্যে কাব্যপ্রতিভা ও সৃজশীলতার দিক থেকে ইমরুল কায়েস ছিলেন শ্রেষ্ঠ।
জেনে রাখো:
ইমরুল কায়েস ষষ্ঠ শতকের আরবি ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন।
তার পুরো নাম ইমরুল কায়েস বিন হু্যুর আল কিন্দি।
আরবের নজদ এলাকায় ষষ্ঠ শতকের শুরুর দিকে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
আরবি ভাষায় লিখিত বিখ্যাত কাব্য সংকলন সাবায়ে ‘মুয়াল্লাকাত এর অন্যতম ও শ্রেষ্ঠ কবি ইমরুল কায়েস ।
গদ্য রচনা ও প্রবাদ বাক্য:
তৎকালীন আরব সমাজে গীতিকাব্যের তুলনায় গদ্য রচনা ও প্রবাদবাক্য অপ্রতুল ছিল ।
বিখ্যাত পণ্ডিত আল-হাকিমের রচনায় কিছু আরবি প্রবাদবাক্য সংগৃহীত ও সংকলিত হয়েছে।
সে সময়ে জনপ্রিয় প্রবাদবাক্য ছিল— ‘মানুষের সৌন্দর্য তার জিহ্বার বাচনশীলতার মধ্যে নিহিত।’
‘বুদ্ধিমত্তা তিনটি বস্তুর ওপর রয়েছে- ফরাসিদের মগজে, চীনাদের হাতে এবং আরবদের জিহ্বায় ।’
উকাজ মেলা ও সাবায়ে মুয়াল্লাকাত:
প্রাক-ইসলামি যুগে আরবদের সাংস্কৃতিক জীবনে উকাজ মেলার বিশেষ গুরুত্ব ছিল।
প্রতিবছর হজের মৌসুমে মক্কার উপকণ্ঠে অবস্থিত উকাজে এ মেলা বসত।
উকাজ মেলায় স্থানীয় বিভিন্ন পণ্যদ্রব্যের পাশাপাশি অনেক বিদেশি পণ্য প্রদর্শিত হতো।
এ মেলায় নাচগান, নানা রকম খেলাধুলা এবং ঘোড়দৌড় ও উষ্ট্রদৌড় প্রতিযোগিতা প্রভৃতি অনুষ্ঠিত হতো।
তবে মেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল কাব্য প্রতিযোগিতা।
কবিরা এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করতেন।
বিচারকদের রায়ে শ্রেষ্ঠ কবিকে পুরস্কার দেওয়া হতো ।
প্রতিযোগিতায় সেরা হিসেবে বিবেচিত সাতটি কবিতা সোনালি হরফে লিখে কাবাঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হতো ।
এরূপ সাতটি কবিতা একত্রে ‘সাবায়ে মুয়াল্লাকাত' নামে পরিচিত।
এগুলো প্রাচীন আরবি সাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ।
উকাজ মেলায় আরবের গোত্রগুলো পরস্পরের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পেত।
ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টির মতে, “ইসলামপূর্ব দিনগুলোতে উকাজ মেলা আরবে এক ধরনের মতবিনিময়ের শিক্ষায়তন বলে গণ্য হতো ।”
তিনি উকাজ মেলাকে 'Academic Francaise' বলে অভিহিত করেন।
আরবি ভাষা:
আরবি ভাষা জাহেলিয়া যুগেও খুব সমৃদ্ধ ছিল।
ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টির মতে, মধ্যযুগে বহু শতাব্দীকাল ধরে এটি (আরবি ভাষা) সভ্যজগতের শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং উন্নতির একমাত্র মাধ্যম ছিল ।
সৃজনশীল প্রতিভা:
প্রাক-ইসলামি যুগে আরবরা অসাধারণ সৃজনশীলতা ও প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিল ।
তারা প্রবাদ বাক্যে খুবই পারদর্শী ছিল এবং একশত পূর্বপুরুষের নাম মুখস্থ বলতে পারত।
প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারীদের তিন ভাগে ভাগ করা হতো।
যথা- ১. খতিব বা বক্তা, ২. শায়েব বা কবি এবং ৩. নোচ্ছাব বা বিভিন্ন গোত্রের পরিচায়ক বা
কুলজি বিশারদ।
জেনে রাখো:
এক নজরে প্রাক-ইসলামি আরবদের জীবনের উল্লেখযোগ্য দিকসমূহ:
• প্রাক-ইসলামি আরবে গোত্রীয় শাসনকাঠামো প্রচলিত ছিল এবং শেখ বা গোত্রপতির নির্দেশ গোত্রের সব সদস্য মেনে চলত ।
গোত্রের সম্মান ও শৃঙ্খলা রক্ষায় সব সদস্যই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল । নিজের জীবন দিয়ে হলেও তারা গোত্রের সম্মান রক্ষা করত।
• সাহিত্য চর্চা বিশেষ করে কাব্যচর্চার প্রতি আরবদের ছিল প্রবল আকর্ষণ। কবিতার মাধ্যমে তারা বংশ গৌরব, যুদ্ধের বিজয় কাহিনি ও নিজেদের জীবনালেখ্য লিপিবদ্ধ করে রাখত। এভাবে তারা সমৃদ্ধ সাহিত্যের অধিকারী হয়েছিল। সাহিত্য ও কাব্যচর্চার মাধ্যমে তারা নিজ দেশ ও জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে স্বদেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছে।
• নিজ বংশের গৌরব বা বীরত্ব ধরে রাখতে দীর্ঘদিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতেও আরবরা কুণ্ঠিত হতো না ।
Повторяем попытку...
Доступные форматы для скачивания:
Скачать видео
-
Информация по загрузке: