বনেদি বাড়ির পুজো মশাটের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সাড়ে তিনশো বছরের দুর্গাপুজো--শুভদীপ রায় চৌধুরী

Описание: বনেদি বাড়ির পুজো মশাটের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সাড়ে তিনশো বছরের দুর্গাপুজো।হুগলি জেলার মশাট প্রাচীন বর্ধিষ্ণু জনপদ। গ্রামের বিশ্বেশ্বরতলার বনেদি চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো সাড়ে তিনশো বছরেরও প্রাচীন। মূলত বর্তমানে যেখানে চট্টোপাধ্যায় পরিবার বসবাস করেন সেখানে অতীতে সরস্বতীর এক শাখা কৌশিকী নদী বইতো। তৎকালীন সময়ে পরিবারের আদিপুরুষ শ্রী পুরন্দর চট্টোপাধ্যায় বাংলাদেশের চট্টোগ্রাম থেকে তারা এই কৌশিকী নদীর তীরে বসবাস শুরু করেন। সেই সময়ে বর্ধমান রাজাদের অধীনে জনাই'এর জমিদারির এই মশাট অঞ্চলের খাজনা আদায়ের ভার ছিল চাটুজ্যেদর হাতে, তারফলে তাদের জমিজমা এবং আর্থিক সঙ্গতিও যথেষ্ট ভালোই ছিল। সেই অঞ্চলে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের বাড়িটি "বাবুবাড়ি" নামে পরিচিত ছিল। সেই সময় পুরন্দর চট্টোপাধ্যায় প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করলেন।, অতীতে প্রায় আনুমানিক ১১৬ বছর অবধি এই বাড়ির দুর্গাপুজো হত কৌশিকী নদীর পাশেই মনসার থানে। তারপর এই বংশের শ্রীগৌরমোহন চট্টোপাধ্যায় পুজোকে স্থানান্তরিত করে নিজের বসতবাড়িতে নিয়ে আসেন বাংলার ১১৬৯ সনে।
গৌড়মোহন চট্টোপাধ্যায়ের নয় সন্তানের নয়টি বংশ মিলে পুজো করে আসছেন, ধরে রেখেছেন সেই প্রাচীন ধারা এবং রীতিনীতি। এই বাড়ির বসতবাড়ির মধ্যে তিনথাম যুক্ত ঠাকুরদালানে প্রতিবছর নিষ্ঠার সাথে উমা আরাধনা হয়। দালানের সামনেই রয়েছে নাটমন্দির, একচালার সাবেকী প্রতিমাই তৈরি হয় এই পরিবারে। জন্মাষ্টমীর পরের দিন অর্থাৎ নন্দ উৎসবের দিন মায়ের কাঠামোপুজো হয় আর শুরু হয়ে যায় চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজোর প্রস্তুতিপর্ব। এই বাড়ির পুজো ষষ্ঠীর দিন শুরু হলেও চণ্ডীপাঠ শুরু হয় মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদতিথিতে। মায়ের বেদীর নীচে দেবীঘট প্রতিষ্ঠার স্থানেই খোদাই করা রয়েছে দুর্গা যন্ত্র।
বংশের তিন শালগ্রামশিলা অর্থাৎ শ্রীরঘুনাথ, শ্রীধর এবং শ্রীলক্ষ্মীজনার্দন রয়েছেন সাথে বাণেশ্বর শিব, গনেশ ও কালীও রয়েছেন। সম্পূর্ণ বৈষ্ণবমতে পুজো হয় বলে কোন আমিষভোগ দেওয়া হয় না। এই কারণে পরিবারে এবং সমগ্র গ্রামে মহালয়া থেকে দশমী পর্যন্ত নিরামিষ খাওয়া হয়। মায়ের ভোগে মোচা ও থোর দেওয়ার চল রয়েছে।দুর্গাপুজোর দশমীর দিন দেবীকে নিবেদন করা হয় পান্তাভোগ এবং মহানবমীর দিন হয় নরনারায়ণসেবা। মহানবমীর দিন হয় কুমারিপুজো।
দশমীর দিন ঘট বিসর্জনের পরই বেলা থাকতে থাকতে দেবী বিগ্রহকে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্বেশ্বরতলার দুধপুকুরের ধারে কারণ সূর্য ডোবার আগেই বিসর্জন দিতে হবে বিগ্রহকে। এরপরই দেবীর বিসর্জন দিতে আসে পাশের গ্রামের মিত্র পরিবার কারণ চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পরেই মিত্র পরিবার দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন বলে। প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় দুই বোনের দেখা হয়, প্রথমে বড় বোন ও তারপর ছোটো বোনের বিসর্জন হয়।
সম্পাদনা--শুভঙ্কর সিনহা উদয়ন মজুমদার
আমাদের ওয়েবসাইট-https://bengali.koulal.com/
ফেসবুক পেজ-  / thekoulal