তারার কথা | শর্মিলা ঠাকুর I TARAR KOTHA | SHARMILA THAKUR |

Описание: সাল ১৯৫৯, ঠাকুর পরিবারের মেয়ে শর্মিলার মাত্র ১৪ বছর বয়সে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের ছবি "অপুর সংসার"এ! প্রথম ছবিতেই সুন্দরী শর্মিলা সিনেমা প্রেমী বাঙালীর নয়নের মনি হয়ে উঠেছিলেন। পরের বছরই মুক্তি পেয়েছিল সত্যজিতের "দেবী"। সে ছবিতেও নাম ভূমিকায় শর্মিলা। সত্যজিৎ রায়ের অত্যন্ত প্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন শর্মিলা। আর তাই তার সবথেকে বেশি ছবিতে নায়িকা চরিত্র করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। মোট পাঁচটি ছবিতে শর্মিলা সত্যজিতের নায়িকা হয়েছেন। যেমন উত্তম কুমারের বিপরীতে "নায়ক" ছবিতে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি তেমনি "অরণ্যের দিনরাত্রি"র আধুনিকা শর্মিলা বাঙালি যুবকের বুকে ঝড় তুলেছিলেন! সত্যজিতের সঙ্গে শর্মিলা শেষ ছবি "সীমাবদ্ধ"তে আমরা পেয়েছিলাম এক ব্যক্তিত্বময়ী অভিনেত্রীকে। ততদিনে অবশ্য তিনি হিন্দি ছবির গ্ল্যামার কুইন হয়ে উঠেছেন। শক্তি সামন্তর "কাশ্মীর কি কলি" ছবিতে কিশোরী শর্মিলার রূপের আগুনে পুড়েছে গোটা দেশের যুবক। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। শাম্মী কাপুর থেকে দিলীপ কুমার, দেবানন্দ থেকে অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জীব কুমার থেকে শশী কাপুর সবার সঙ্গেই অসংখ্য সুপারহিট ছবি করেছেন ধারাবাহিকভাবে। তবে জুটি হিসেবে রাজেশ খান্নার সঙ্গেই তার সবথেকে বেশি হিট ছবি। "আরাধনা" "অমরর প্রেম", "দাগ", এর মত অসংখ্য ছবি। ‌ বাংলাতে সৌমিত্রর সঙ্গে ক্যারিয়ার শুরু হলেও উত্তম কুমারের সঙ্গে তাঁর প্রত্যেকটি ছবিই ছিল সুপারহিট। "শেষ অংক" "অমানুষ" "আনন্দ আশ্রম" ছবিতে উত্তম কুমারের পাশে তার উপস্থিতি বিশেষভাবে নজর কেড়েছে বারবার। "অমানুষ", "আনন্দ আশ্রম" এর মত সুপারহিট দ্বিভাষিক ছবি ছাড়াও উত্তম শর্মিলার জুটির হিন্দি ছবি "দূড়িয়া"ও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। মহানায়কেরও বিশেষ পছন্দের অভিনেত্রী ছিলেন শর্মিলা। তার পরিচালনায় "কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী" ছবিতে দ্বৈত ভূমিকায় শর্মিলা ঠাকুরের অভিনয় আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। শর্মিলা শুধু সুন্দরী অভিনেত্রীই ছিলেননা, ছিলেন সাহসী এবং সময় থেকে অনেক বেশি আধুনিকা। রক্ষণশীল ঠাকুর পরিবারের মেয়ে হয়ে ছয়ের দশকে‌ একটি বিখ্যাত ফিল্ম ম্যাগাজিনের জন্য টু পিস বিকিনিতে ফটোশুট করে বিতর্কের শিরোনামে এসেছিলেন। শাম্মী কাপুরের সাথে "অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস" ছবিতে আবারও বিকিনি পরায় সেই বিতর্ক আরও বেড়ে যায়। সে সময় ভারতীয় ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন নবাব পাতাউদি প্রেমে পড়েন শর্মিলার। যদিও তখন তিনি সিমি গেরোয়াল এর সঙ্গে রিলেশনশিপে ছিলেন। সিমির সঙ্গে ব্রেকআপ করে নবাব পাতাউদি বিয়ে করেন শর্মিলা ঠাকুর কে। ঠাকুর পরিবারের মেয়ে হয়ে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে নবাব পাতাউদি কে বিয়ে করায় আবারো ভয়ঙ্কর বিতর্কের মুখোমুখি হন শর্মিলা ঠাকুর। যদিও কোনো বিতর্ককেই কখনও তিনি বিশেষ পাত্তা দেননি!! ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকতেই বিয়ে করেছিলেন, তিন সন্তানের মা হয়েছিলেন, তাতে কিন্তু তার জনপ্রিয়তা কোনভাবেই আহত হয়নি। হিন্দির পাশাপাশি সুযোগ পেলেই বাংলা ছবিতে অভিনয় করতে ছুটে এসেছেন। "নির্জন সৈকতে", "ছায়া সূর্য", "যদু বংশ", "অনুরোধ", "প্রতিদান", "অন্তহীন", "শুভ মহরত" এর মত অসংখ্য বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন। মেইনস্ট্রিম হিন্দি ছবির গ্ল্যামারাস নায়িকা হয়েও গুলজার এর "মৌসম" ছবিতে অসাধারণ অভিনয় এর জন্য পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার। গৌতম ঘোষের "আবার অরণ্যে" ছবিতে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ সহ:অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার। বয়স বেড়েছে, শর্মিলার নাতনি সারা এখন হিন্দি ছবির জনপ্রিয় নায়িকা কিন্তু আজও তাঁর সৌন্দর্যে ভাঁটা পড়েনি। "ধারকন" "মন" এর মত ছবিতে চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে যেমন অভিনয় করেছেন, তেমনি এই বয়সেও র্্যাম্পে হেঁটেও দর্শকের মন জয় করেন। সৌন্দর্য আর আভিজাত্যের সংমিশ্রণে শর্মিলা ঠাকুর চিরকাল উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছিলেন আজও তাই আছেন।

কলম: বুড়োবর
কন্ঠ: শুভব্রত
কাটাকুটি: ঋজুল
কারিগরি কর্ম: পুষ্পেন্দু

পরিবেশনা: মুখোশ পরিবার