ধানের শীষ গঠন পর্যায়
Автор: Krishi kollan
Загружено: 2025-10-12
Просмотров: 7
Описание:
ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। দেশের কৃষি অর্থনীতির মূলভিত্তি এই ধান চাষের উপর নির্ভরশীল। ধান গাছের বেড়ে ওঠার বিভিন্ন ধাপের মধ্যে “শিষ অবস্থায়” বা “শীষ গঠন পর্যায়” একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল সময়। এই অবস্থায় ধান গাছের ভেতরে দানা বা শিষ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা পরবর্তী সময়ে ফলন বা উৎপাদনের মান নির্ধারণ করে। নিচে ধানের শিষ অবস্থার পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, বৈশিষ্ট্য, পরিচর্যা, প্রভাব ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
ধানের শিষ অবস্থার অর্থ ও ধাপ
ধান গাছের জীবনচক্রে তিনটি প্রধান ধাপ রয়েছে:
১. বৃদ্ধি পর্যায় (Vegetative stage)
২. প্রজনন পর্যায় (Reproductive stage)
৩. পক্বতা বা পরিপক্বতা পর্যায় (Ripening stage)
এর মধ্যে শিষ অবস্থায় ধান থাকে প্রজনন পর্যায়ে, যখন গাছের শীর্ষে ফুল বা শিষ তৈরি হতে শুরু করে। সাধারণত চারা রোপণের ৬০-৭০ দিন পর গাছ এই পর্যায়ে পৌঁছায়, যদিও জাতভেদে সময় কিছুটা তারতম্য হয়।
এই সময়ে গাছের কান্ডের ভেতরে “প্যানিকল” বা শিষ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা পরে গাছের মাথায় বেরিয়ে আসে। কৃষকের ভাষায় এই সময়টিকে “ধানের শিষ ধরা” বা “শিষ বের হওয়া” সময় বলা হয়।
ধানের শিষ গঠনের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন
শিষ গঠনের সময় ধান গাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে—
কান্ডের ভেতরে জমে থাকা “শক্তি বা কার্বোহাইড্রেট” শিষে সরবরাহ হয়।
গাছের পাতাগুলো গাঢ় সবুজ হয়, কারণ এতে ক্লোরোফিলের মাত্রা বেড়ে যায়।
শিষের মধ্যে ফুল তৈরি হয়, এবং এই ফুল থেকেই দানা হয়।
গাছের অভ্যন্তরে পুষ্টি প্রবাহ মূলত উপরের দিকে চলে যায়, ফলে নিচের পাতাগুলো কিছুটা হলদে হতে শুরু করে।
এই ধাপে ধান গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, তবে ফুল ও দানা পূর্ণতা লাভ করে।
ধানের শিষ অবস্থায় আবহাওয়ার প্রভাব
এই সময় আবহাওয়া ধানের ফলনের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।
তাপমাত্রা: ২৫°–৩০°C তাপমাত্রা সবচেয়ে উপযোগী। অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়া শিষ গঠনে ব্যাঘাত ঘটায়।
ধানের শিষ অবস্থায় সার প্রয়োগ
শিষ ধরা সময় সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি।
ইউরিয়া সার: শিষ গঠনের আগে বা গঠনের সময় প্রতি বিঘায় ৬-৮ কেজি ইউরিয়া ছিটানো ভালো। এটি দানা গঠনে সহায়তা করে।
পটাশ সার: প্রতি বিঘায় ৩-৪ কেজি পটাশ দিলে শিষ শক্ত ও দানায় ভরাট হয়।
জিপসাম ও জিঙ্ক: দানার পূর্ণতা ও গাছের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
জৈব সার (গোবর, ভার্মি কম্পোস্ট): মাটির উর্বরতা রক্ষা করে ও গাছকে স্থিতিশীল রাখে।
অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করা বিপজ্জনক, কারণ এতে শিষ ঝরে যেতে পারে বা গাছ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
ধানের শিষ অবস্থায় পরিচর্যা
এই সময় ধান গাছের যত্নে কিছু বিশেষ দিক অনুসরণ করতে হয়—
পানির ব্যবস্থা:
শিষ গঠনের সময় জমিতে ৫–৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হয়। পানি শুকিয়ে গেলে শিষ পূর্ণতা পায় না।
আগাছা দমন:
আগাছা পুষ্টি ছিনিয়ে নেয়, তাই আগাছা পরিষ্কার রাখা জরুরি।
রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ:
এই পর্যায়ে পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ, গন্ধি পোকা, এবং ব্লাস্ট রোগ বেশি দেখা দেয়।
পোকা দমনে ট্রাইকোগ্রামা বা বিটি (BT) জাতীয় জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রয়োজনে অনুমোদিত কীটনাশক যেমন ইমিডাক্লোরোপ্রিড বা ফিপ্রোনিল দেওয়া যেতে পারে।
বাতাস ও আলো প্রবাহ:
জমির চারপাশে বাতাস চলাচল নিশ্চিত করতে হয় যাতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা জমে না থাকে।
ধানের শিষ অবস্থায় রোগ ও পোকামাকড়
ধানের শিষ অবস্থায় সবচেয়ে সাধারণ কিছু রোগ ও পোকামাকড় হলো—
গন্ধি পোকা (Stink bug):
শিষের রস শোষণ করে দানাকে অপূর্ণ করে দেয়। ফলে দানা কালচে হয় ও ফলন কমে যায়।
ব্লাস্ট রোগ:
ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট, যা শিষ ও পাতায় কালো দাগ ফেলে। রোগের বিস্তার ঠেকাতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ প্রয়োজন।
ব্রাউন স্পট:
পাতায় বাদামী দাগ তৈরি হয়, যা শিষের বিকাশে বাধা দেয়।
শীষ মোড়ানো পোকা:
পাতায় ডিম দেয় ও পাতা মুড়ে খায়। এর ফলে শিষ দুর্বল হয়।
শিষ অবস্থায় ধানের শারীরিক লক্ষণ
শিষ গঠনকালীন ধানগাছের কিছু দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্য দেখা যায়—
পাতাগুলো গাঢ় সবুজ হয়।
কান্ড মোটা হয় ও উপরের দিকে শক্ত হয়ে যায়।
গাছের মাঝখান থেকে ধীরে ধীরে শিষ বের হতে শুরু করে।
শিষে ফুল দেখা যায় এবং কিছু দিন পর ফুল ঝরে দানা তৈরি হয়।
এই সময়টিকে স্থানীয়ভাবে “ধানের ফুল ফোটা” বা “ধানের ফোটা সময়”ও বলা হয়।
ধানের শিষ অবস্থায় কৃষকের করণীয়
শিষ অবস্থায় কৃষকদের কিছু বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হয়—
জমির পানি ও সারের ভারসাম্য রক্ষা করা।
প্রতিদিন গাছের শিষের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
ঝড় বা অতিবৃষ্টির আশঙ্কায় জমির পানি নিষ্কাশনের পথ খোলা রাখা।
সঠিক সময়ে কীটনাশক প্রয়োগ করা, তবে এলোমেলোভাবে নয়।
শিষ অবস্থার গুরুত্ব
ধানের শিষ অবস্থাই আসলে ফলন নির্ধারণের মূল সময়। এই সময়ে—
দানার সংখ্যা, আকার ও পূর্ণতা নির্ধারিত হয়।
পুষ্টি সঞ্চালনের প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকে।
রোগ বা প্রতিকূল পরিবেশের ক্ষতি হলে পুরো মৌসুমের ফলন নষ্ট হতে পারে।
তাই কৃষকদের “শিষ অবস্থার যত্নই ফসলের ভবিষ্যৎ”—এই নীতিতে কাজ করতে হয়।
ফলন বৃদ্ধির উপায়
শিষ অবস্থায় ফলন বাড়ানোর জন্য কিছু কার্যকর উপায় হলো—
নিয়মিত জৈব সার ব্যবহার করা.
পানি ও সারের সঠিক সময়মতো প্রয়োগ।
পোকামাকড় প্রতিরোধে জৈব কীটনাশক প্রয়োগ।
জমির মাটির গুণাগুণ পরীক্ষার ভিত্তিতে সার প্রয়োগ।
ধানের শিষ অবস্থায় পরিচর্যা ধান চাষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই সময়ের সামান্য অবহেলাও পুরো মৌসুমের পরিশ্রম নষ্ট করতে পারে। তাই কৃষকদের উচিত এই পর্যায়ে প্রতিদিন ফসলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা, সার-পানি ও রোগনাশক সঠিকভাবে প্রয়োগ করা এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
সঠিক পরিচর্যা, বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা ও সচেতন কৃষকের প্রচেষ্টায় ধান গাছের শিষ পূর্ণতা লাভ করে, ফলে দানায় ভরে ওঠে কৃষকের স্বপ্নের গোলা।
Повторяем попытку...
Доступные форматы для скачивания:
Скачать видео
-
Информация по загрузке: