সার, বীজ, কীটনাশক ব‌্যবসা‌য়ের ক্ষে‌ত্রে আইনগত যে ০৩‌টি বিষয় জান‌তে ও মান‌তে হ‌বে।

Описание: আসসালামু আলাইকুম। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে আপনার ব্যবসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সার-কীটনাশক এবং বীজ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যেবিষয়গুলো অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে:
সার ও কীটনাশক ব্যবসার ক্ষেত্রে:
১. সঠিক লাইসেন্স ও নিবন্ধন
• করণীয়:
সার এবং কীটনাশক বিক্রয়ের জন্য অবশ্যই ডিলার বা খুচরা বিক্রেতা হিসেবে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিবন্ধন বা লাইসেন্স গ্রহণ করুন। সময়মতো এটি নবায়ন করুন। লাইসেন্স ছাড়া সার এবং কীটনাশক বিক্রি করলে শাস্তির বিধান আছে।
২. সারের ও কীটনাশকের সঠিক মান ও সরবরাহ
• করণীয়:
o অনুমোদিত উৎস: শুধু সরকার বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত ডিলার বা উৎস থেকেই সার এবং কীটনাশক সংগ্রহ করুন। অননুমোদিত উৎস থেকে সার এবং কীটনাশক কেনা-বেচা করবেন না।
o মান: কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত মান নিশ্চিত করুন। কোনো প্রকার ভেজাল বা নিম্নমানের সার এবং কীটনাশক বিক্রি করবেন না।
o সংরক্ষণ: সার এবং কীটনাশক এমনভাবে সংরক্ষণ করুন যেন তার মান বা গুণাগুণ নষ্ট না হয়।
৩. মূল্য ও চালান সংরক্ষণ
• করণীয়:
o বিক্রয়মূল্য: সরকার বা প্রস্তুতকারক কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি করুন। বেশি দামে বিক্রি করা গুরুতর অপরাধ।
o চাহিদা অনুযায়ী বিতরণ: কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী এবং নির্ধারিত পরিমাণেই সার বিক্রি করুন। কোনোভাবেই কৃত্রিম সংকট তৈরি বা অবৈধ মজুত করা যাবে না।
o রেকর্ড: সারের ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত সকল চালান, ভাউচার ও রেকর্ড নিয়মিতভাবে সংরক্ষণ করুন এবং পরিদর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী তা প্রদর্শন করুন।
বীজ ব্যবসার ক্ষেত্রে :
১. সঠিক লাইসেন্স ও নিবন্ধন
করণীয়:
বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, আমদানি, রপ্তানি বা বিক্রির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ শাখা বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লাইসেন্স নিন। সময়মতো লাইসেন্স নবায়ন করুন।
২. বীজের মান নিশ্চিতকরণ
• করণীয়:
o জাত অনুমোদন: শুধুমাত্র জাতীয় বীজ বোর্ড (NSB) কর্তৃক অনুমোদিত জাতের বীজই বিক্রি করুন।
o মান নিয়ন্ত্রণ: বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি (SCA) কর্তৃক প্রত্যয়িত বা সরকার নির্ধারিত মানের বীজ বিক্রি করুন। নিম্নমানের, ভেজাল বা মেয়াদ উত্তীর্ণ বীজ বিক্রি করা যাবে না।
o পরীক্ষা: আপনি যদি নিজেই বীজ প্রক্রিয়াজাত বা উৎপাদন করেন, তবে সরকারি পরীক্ষাগারে মান পরীক্ষা করিয়ে নিন।
৩. সঠিক লেবেলিং
• করণীয়: বীজ প্যাকেটে বীজ আইনের ধারা ২৯ অনুযায়ী সকল তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। যেমন:
o বীজের জাত ও নাম।
o বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির সিল (যদি প্রত্যয়িত হয়)।
o শতকরা অঙ্কুরোদগম হার (Germination Percentage)।
o শতকরা বিশুদ্ধতার হার (Purity Percentage)।
o প্যাকেজিং ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ।
o বিক্রয়মূল্য।
সার-বীজ-কীটনাশক বিক্রয়ের ক্ষেত্রে:
১. সঠিক পরিমাপ ও মূল্য
• করণীয়:
o সঠিক পরিমাপ: ওজনে কম দেওয়া বা পরিমাপে কারচুপি করা ভোক্তা-অধিকার আইনের সবচেয়ে বড় অপরাধগুলোর একটি। সবসময় সঠিক ও মানসম্মত পরিমাপ যন্ত্র ব্যবহার করুন।
o মূল্য তালিকা: দোকানে বিক্রিত সকল পণ্যের মূল্য তালিকা সহজে দৃশ্যমান স্থানে টাঙিয়ে রাখুন।
o সরকার নির্ধারিত মূল্য: সরকার নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে সার, বীজ বা কীটনাশক বিক্রি করবেন না।
২. ভেজাল ও নকল পণ্য
• করণীয়:
o ভেজাল/নকল: জেনে-বুঝে ভেজাল বা নকল সার, বীজ বা কীটনাশক বিক্রি করবেন না। এটি অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ।
o স্বাস্থ্য ঝুঁকি: মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো পণ্য বিক্রি থেকে বিরত থাকুন।
o মেয়াদ উত্তীর্ণ: মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করবেন না।
৩. রশিদ প্রদান ও তথ্য গোপন না করা
• করণীয়:
o ক্যাশ মেমো: ক্রেতাকে তার কেনা পণ্যের সঠিক ক্যাশ মেমো (রশিদ) সরবরাহ করুন।
o পণ্যের গুণাগুণ: পণ্যের গুণাগুণ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ব্যবহারের সঠিক তথ্য ক্রেতার কাছে গোপন করবেন না।
উপরোক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করে ব্যবসা পরিচালনা করা আবশ্যক।